কম্পিউটার আবিস্কারের ইতিহাস
কে তৈরি করল এই জাদুর বাক্সটা? এ প্রশ্নের উত্তরে সবার আগে চলে আসে
চালর্স ব্যাবেজর নাম। মূলত তিনিই আধুনিক কম্পিউটারের জনক। কিন্তু কম্পিউটারের
ইতিহাস প্রায় পাঁচ হাজার বছরে পুরোনো! সে সময় গ্রিক সভ্যতায় অ্যাবাক্যাস নামে
এক ধরনের গণনা যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীকালে চীনসহ পৃথিবীর বহুদেশেই
অব্যাক্যাস ব্যবহুত হতো।
এর পর কেটে যায় বহু বহু বছর। ১৬২৪ সালে
ভিলহেলম স্কিকার্ড নামে এক বিজ্ঞানী তৈরি করলেন নতুন ধরনের এক ক্যালকুলেটিং
ম্যাশিন বা গণনা যন্ত্র। কিন্তু তার সেই গণক যন্ত্র বিজ্ঞান মহলে সাড়া ফেলতে
পারেনি।
পাঠক, আরেক জন বিজ্ঞানীর নাম বলব। ব্রেইজ
প্যাসকেল (১৬২৩-১৬৬২)। চাপ নির্ণয়ক সূত্রের জনক প্যাসকেলকে কম্পিউটারের ইতিহাসের
মধ্যে টানা কেন?
বিশ্বাস হবে কিনা জানি না, তবে এটা সত্যি, পৃথিবীর প্রথম সার্থক ক্যালকুলেটিং মেশিন, বর্তমানে যাকে আমরা ক্যালকুলেটর বলি এর
আবিষ্কর্তা ব্রেইজ প্যাসকেল।
মাত্র উনিশ বছর বয়সে প্যাসকেল এই যন্ত্র
আবিষ্কার করেন। পরবর্তী তিন বছরে প্যাসকেল এই যন্ত্রকে পঞ্চাশবার আপডেট করে ছিলেন।
বাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছিল প্যাসকেলের গণক যন্ত্র। এই যন্ত্র শুধু যোগ আর বিয়োগই
করতে পারত,
গুণ, ভাগ পারত না।
প্যাসকেলের পরেই কম্পিউটার বা গণক
যন্ত্রের ইতিহাসে যোগ হয় আরেক জন গণিতবিদের নাম। বিখ্যাত জার্মান ভিলহেলম লিবনিজ।
লিবনিজের গণক যন্ত্র যোগ বিয়োগ তো করতে পারতই সেই সাথে গুণ ভাগ এমকি সংখ্যার
বর্গমূল পর্যন্ত বের করতে পারত।
তারপর কেটে যায় প্রায় দেড়শো বছর। এর
মধ্যে এই যন্ত্রের আর উল্লেখ্যযোগ উন্নতি ঘটেনি। ১৮৩৬ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী
চার্লস ব্যাবেজ তৈরি করেন আগের চেয়ে আরো উন্নত মানের এক গনক যন্ত্র। এর নাম
এনালাইটিক ইঞ্জিন। এটা সংয়ক্রিয় গণকযন্ত্র।
নিজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। দুই অংশে
বিভক্ত ছিল যন্ত্রটা। মেমরি ও ভিজিট। মেমরিতে ধরে রাখা ৫০ থেকে ১০০০টি সংখ্যা
পর্যন্ত পরে আবার কাজে লাগানো যেত।
১৮০০ সালের দিকে আমেরিকার আদমশুমারি
বিভাগের এক কর্মকর্তা হার্মান হলারিথ এর মাথায় এলো এক নতুন চিন্তা। সাধারণ ভাবে
আদমশুমারি করতে গেলে প্রচুর সময় ব্যায় হয়। শ্রমও লাগে অনেক। হলারিথ চিন্তা
করলেন,
গণনার ক্ষেত্রে যদি পাঞ্চকার্ড ব্যবহার
করা যেত তাহলে আদমশুমারির কাজ আরো দ্রুত করা সম্ভব হতো। তিনি চিন্তাকে বাস্তবে
রূপদান করতে সচেষ্ট হলেন।
এই তার উদ্ভাবিত যন্ত্রে কতগুলো কার্ডের
ছিদ্র দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা বুঝানো হতো। ছিদ্র দ্বারা বুঝানো সংকেতকে কাজে
লাগিয়ে গণনা করার এক নতুন পদ্ধতি আবিস্কৃত হলো। পরবর্তী আদমশুমারিতে এই যন্ত্রও
ব্যবহার করে বহু সময় যেমন বাঁচানো গিয়েছিল, খরচ কমে গিয়েছিল কয়েক গুণ।
১৪৪৩ সালে বিশ্বে সর্ব প্রথম স্বয়ংক্রিয়
কম্পিউটারটি তৈরি করেন অধ্যাপক হাওয়ার্ড একিন এবং আইবি এম এর প্রকৌশলীরা।
কম্পিউটারটি তৈরি করা হয় হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর নাম রাখা হয় হার্ভাড আইবএম
মাক-১।
তবে আজকাল যে মডেলের কম্পিউটার প্রচলিত এ
ধরনের কম্পিউটার প্রথম তৈরি করেছিল আমেরিকার পেনিনসোলা বিশ্ববিদ্যালয়। এর নাম
রাখা হয় এনিয়াক (ENIAC-
Electronic Numorical Integrator and Computer)।
চার বছরের দীর্ঘ পরিশ্রমে তৈরি এ
কম্পিউটারের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ডব্লিউ সকলে নামের এক বিজ্ঞানীর। এই
কম্পিউটারে ওজন প্রায় ত্রিশ টন এবং ঘণ্টায় ১৫৬ কিলোওয়ার্ড বিদ্যুৎ ব্যয় হতো।
এরপর ১৯৪৯ সালে জনফন নমম্যানের দেওয়া নতুন এক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হলে
অ্যাডভ্যাক কম্পিউটার।
১৯৪৭ সালে আমেরিকার বেল ল্যাবরেটরির
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন ট্রানজিস্টর নামের এক ক্ষুদ্র ইলেক্টনিক্স পার্টস।
কম্পিউটারে ইলেক্ট্রিক ভাল্বের পরিবর্তে ব্যবহার শুরু হলো ট্রানজিস্টরের। আমূলে
বদলে গেল কম্পিউটারের চেহারা।
শুরু হলো দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের
যুগ। তবে এ যুগও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। আইসি আবিষ্কারে পর ১৯৫৯ সালে কম্পিউটারে
সংযোজিত হলো নতুন এই ইলেক্টনিক্স পার্টস। তৈরি হলো মিনি কম্পিউটার। আর প্রকল্পটি
বাস্তবায়ন করেছিল আলাদা আলাদা ভাবে আমেরিকার টেক্সাস ইনুস্ট্রুমেন্ট ও ফেয়ার
চাইল সেমি কল্ডাক্টর নামে দুটি কোম্পানি। মিনি কম্পিউটার দ্বিতীয় প্রজন্মের
কম্পিউটারে তুলনায় অনেক বেশি কার্যক্ষম।
১৭৭০ সালে লার্জ স্কেল আইসি ব্যবহার করে
তৈরি হলো সর্বাধুনিক মাইক্রো কম্পিউটার। এখনো পর্যন্ত মাইক্রো কম্পিউটারের যুগ
বর্তমান। ১৯৭০ সাল থেকে মাইক্রো কম্পিউটার যুগ শুরু সেদিনের কম্পিউটারের সাথে
আজকের অত্যাধুনিক কম্পিউটারে পার্থক্য ও কার্যক্ষমতা আকাশ আর পাতাল। দিন দিন
বিশ্বের নানা প্রান্তে আবিষ্কৃত হচ্ছে কম্পিউটারের নতুন প্রযুক্তি।
তাই প্রায়ই প্রতিদিনই নতুন নতুন মডেল ও
সুবিধা সম্পন্ন কম্পিউটারে খবর আসে গণমাধ্যমগুলোতে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন